গুরুচাঁদ ঠাকুর (একটি তথ্যবহুল সংক্ষিপ্ত জীবনী)

 

গুরুচাঁদ ঠাকুর

 

জন্মঃ- ১৮৪৬ সালের ১৩ই মার্চ;

জন্মস্থানঃ- বর্তমান বাংলাদেশের ওড়াকান্দী গ্রাম, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ।

পিতাঃ- হরিচাঁদ ঠাকুর

মাতাঃ- শান্তি মাতা।

ঠাকুরদাঃ- যশোমন্ত ঠাকুর।

গুরুচাঁদ ঠাকুরের বয়স যখন সাত বছর পূর্ণ হয়, তখন তাঁর পিতা হরিচাঁদ তাঁকে বোঝান যে, আমাদের সমাজে তো তেমন কোন বিদ্যা শিক্ষা নেই। তাই-

আমার প্রাণের ইচ্ছা তোমাকে পড়াই।

বিদ্যার অমূল্য মূল্য জগতে শিখাই। (গু..পৃঃ ৩৯)

গুরুচাঁদ শিক্ষা গ্রহণে রাজি হয়ে যান। আর পাঠশালার শিক্ষা গ্রহন করা জন্য পদ্মবিলার সাধু দশরথের কাছে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন।

এর পর মল্লকান্দী গ্রামে গোলকের বাড়িতে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। এইভাবে তিন বছর শিক্ষা গ্রহণের পরে তিনি ওড়াকান্দীতে ফিরে আসেন। কিন্তু ওড়াকান্দীতে কোন উচ্চবর্ণীয়দের স্কুলে ভর্তি হতে পারেননা। কারণ তিনি তো পতিত অস্পৃশ্য নিচু জাতির লোক। উচ্চবর্ণীয়রা তাঁকে শিক্ষার অধিকার কেন দেবে? তখন বাধ্য হয়ে তিনি মুসলমানদের মক্তবে ভর্তি হন।

ওড়াকান্দী মক্তবেতে প্রভুকে পাঠাল।

কিছুকাল তথাকারে শ্রীগুরু চরণ।

আরবি পারসী ভাষা করে অধ্যয়ন।। (গু..পৃঃ ৪০)

সেখানে আর্বি, পার্সী ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। মক্তবের শিক্ষা সমাপ্ত হলে উচ্চ শিক্ষার কোন সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৮৫৮ সালে তাঁকে শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ করতে হয়। তখন থেকে বাড়িতে থেকেই তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ পড়ে জ্ঞানার্জন করতে শুরু করেন।

এরপর সেই সময়ের নিয়মানুসারে দ্বাদশ বর্ষের কালে পরিণয়।’(গু..পৃঃ ৫৬৪)

পিতামাতার ইচ্ছানুসারে গুরুচাঁদ ঠাকুর সত্যভামা কে বিবাহ করে সংসার ধর্ম শুরু করেন। পিতা গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর উপর সংসারের কর্তব্য পালন করার জন্য দায়িত্ব সপে দেন।

তবে তিনি পুত্রকে পরামর্শ দেন এই বলে যে,

সংসার ধর্ম করতে হলে সংযমী হতে হবে। অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হবে।

এরপর ধীরে ধীরে গুরুচাঁদ ঠাকুরের চার পুত্র এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। পুত্রদের নাম যথাক্রমে শশিভূষণ, সুধন্য, উপেন্দ্র সুরেন্দ্র। কন্যার নাম করুণাময়ী।

একুশ বর্ষের কালে জন্মিল নন্দন।

হরিচাঁদ রাখে নাম শ্রীশশিভূষণ। (গু..পৃঃ ৫৬৪)

গুরুচাঁদ ঠাকুরের যখন ২১ বছর বয়স হয়ে তখন তার প্রথম সন্তান শশিভূশণ জন্ম গ্রহণ করেন।

১৮৬৭ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুর ব্যবসা শুরু করেন।

গুরুচাঁদ ঠাকুর ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার চালাতেন। সংসারে বেশ আয় উন্নতি হচ্ছিল। তিনি ১৮৭৯ সালে ২০ টাকা ট্যাক্স দেন সরকারকে একজন ব্যবসায়ী হিসাবে। তিনি গরিব লোকদেরকে ব্যবসা কৃষিকাজ করার জন্য অর্থ সাহায্য করতেন।

সংসারের সমস্যা যখন দূর এবং সবকিছু বেশ ভালভাবে চলতে লাগল তখন তিনি পিতৃ দায়িত্ব পালনে মনোনিবেশ করেন।

১৮৭২ সালে সার্বিক শিক্ষার দাবিতে বাংলায় গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে মতুয়াদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। সেইজন্য ইংরেজ সরকার নবপ্রবর্তিত ইংরেজী শিক্ষা সরবস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই বিদ্রোহের ফলে অনুন্নত শ্রেণীর মানুষকে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান জানান হয়। (গু..পৃঃVII XIV)

১৮৭৯ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুর হরিদাসপুর- কর্মচারী রেখে ব্যবসা শুরু করেন।

১৮৮০ (১২৮৭ বাংলা) সালে নভেম্বর মাসে চৌধুরী বাড়িতে পাঠশালা তৈরী করা হয়।

১৮৮১ সালে খুলনা জেলার দত্তডাঙায় ঈশ্বর গাইনের বাড়িতে শ্রদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে এক বিশাল জাগরণী সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় গুরুচাঁদ ঠাকুর সভাপতিত্ব করেন।

১৮৮১ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশে খুলনা শহরে Namasudra Welfare Association গঠিত হয়। উক্ত সংগঠনের তৎকালীন ২২টি জেলার প্রতিনিধি যোগদান করেন। শিক্ষা জাগরণের এই সম্মেলনের পর সর্বত্র সর্বশিক্ষা অভিযানের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। (তথ্যঃ-অধিকার পত্রিকা, সপ্তম সংখ্যা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৬, বিষয়-বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন, লেখক- ভবানী সঙ্কর রায়)

১৯০৭ সাল। এই কাজের জন্যও গুরুচাঁদ ঠাকুর ডাঃ মীড্ সাহেবের স্মরনাপন্ন হন। মীডের চেষ্টায় শশীভূষণ ঠাকুর অনুন্নত শ্রেণীর মধ্যে সর্বপ্রথম সাব-রেজিষ্টারের চাকরি পান।

১৯০৭ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশেনমঃশূদ্র সুহৃদনামে পত্রিকা প্রকাশ শুরু হয়। প্রথম সম্পাদক হন আদিত্য কুমার চৌধুরী বিশেষ সহযোগিতায় ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই পত্রিকা বছর চলে। সুরেন্দ্রনাথই এই পত্রিকা চালানোর কাজ করতেন। কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যুতে এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়।

১৯০৮ সালে এই উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণের ফলে নমঃ তথা অন্যান্য নিম্নশ্রেণীর লোকদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটা সাড়া পড়ে যায়।

ডাঃ সি. এস. মীড্ এর সংস্পর্শে

অস্ট্রেলিয়ান মিশনারি ডাঃ সি. এস. মীড্ (ডাঃ সিসিল সিলাস মীড্) যিনি খৃষ্ট ধর্মের প্রচারের জন্য এবং দীন্ দরিদ্রদের সেবা করার জন্য ঘুরতে ঘুরতে বঙ্গদেশে আসেন। আর ১৯০৬ সালে প্রথমে ফরিদপুরে (জেলা) আসেন। তারপর ঘটনা ক্রমে তিনি তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে ওড়াকান্দীতে গুরুচাঁদ ঠাকুরের কাছে আসেন।

১৯০৮ সালে ওড়াকান্দীতে একটি নারী শিক্ষা ট্রেনিং স্কুলও স্থাপন করা হয়। এই সময় প্রসূতি মা শিশু সেবার জন্য মাতৃমঙ্গল প্রতিষ্টান করা হয়।

তে-ভাগা আন্দোলনঃ-

বাংলার অধিকাংশ অনুন্নত শ্রেণীর মানুষ কৃষিজীবী। তাদের বেশিরভাগের আবার নিজস্ব চাষাবাদ যোগ্য জমি ছিল না। বর্ণহিন্দু জমিদার, জোতদার গাতিদারদের জমি তারা ভাগচাষ করত। পূর্ববাংলায় এই ভাগচাষী-আন্দোলন

কারীরা অধিকাংশই যশোর, খুলনা ফরিদপুরের নমঃশূদ্র। আর এরা ছিল বেশিরভাবে ধর্মবলম্বী। এই অনুন্নত শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে গুরুচাঁদ ঠাকুর সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি মতুয়াদের ধর্মীয় সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক পরিপর্তনের এই আন্দোলন শুরু করেন। যশোর, খুলনা ফরিদপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকদের জমির সেস্(কর) ধার্য করা হয়। যার ফলেনগতে খাজনা আদায় প্রথাএবং বর্গা প্রথা চালু হওয়ারপরধান-কড়ারী (Rice conditional) প্রথাহিসাবে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হত। তার ফলে জমির খাজনাও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে জমির বর্গাদারকে জমি চাষাবাদের জন্য কম ধান দেওয়া হত তাই জমি ভাগচাষী-বর্গাদারকে ফসলের কমভাগ দেওয়া হত। ফলে কৃষকদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ দেখা দেয়।

পাচঁ টাকা কর্জ করি কত অভাজন।

সুদের পাষাণ তলে ছেড়েছে জীবন।।

জমি গেছে জমা গেছে, গেছে অস্থাবর।

ঘর-হারা লক্ষ্মী-ছাড়া অবনী ভিতর।। (গু..পৃঃ X)

গুরুচাঁদ ঠাকুর বাংলার এই সর্বহারা কৃষকদের দুর্দশা দেখে তাদের পাশে গিয়ে দাড়িয়েছিলেন। ১৯০০ সালের প্রথম দিকে তাঁর নেতৃত্বে কৃষকেরা তে-ভাগা আন্দোলন শুরু করে। এই প্রথার প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে মাঝে মধ্যেই তারা জমিদারের হাট বাজার লুট ভাঙচুর করত। পুলিশ এসে তাদের উপরও আক্রমণ করত। এইভাবে ক্রমে ক্রমে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের নমঃশূদ্ররা ইংরেজ প্রশাসনের কাছে আতঙ্ক হয়ে ওঠে। মুসলিম কৃষকদের সহায়তায় বর্গাজমি চাষের ক্ষেত্রেও আবার তারা নতুন দাবি তুলে আনে। জমিদারদের জানিয়ে দেয় যে, উৎপন্ন ফলসের দুই তৃতীয়াংশ ভাগ না দিলে তারা আর জমি চাষ করবেনা।

তে-ভাগা আন্দোলনের বিস্তৃত বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্থানের প্রাক্তন মন্ত্রী শরৎচন্দ্র মজুমদারেররাইচরণ চরিতগ্রন্থে। যশোরের অন্যতম অস্পৃশ্য পতিত নমঃ কৃষক নেতা রাইচরণ বাবু ছিলেন এই তে-ভাগা আন্দোলনের পুরোভাগে। অনুমানিক ১৮৯৫ সালে যশোরের কালিয়া থানার অন্তর্গত হাড়িয়ার ঘোপ গ্রামে নিতাই মন্ডলের বাড়িতে অনুষ্ঠিত সুপরিকল্পিত একটি ‘Uplift meeting’ থেকেই রাইচরণবাবু এই সানাহুজ কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই মিটিং- ওড়াকান্দীর পক্ষ থেকে হাজির ছিলেন ঠাকুর গুরুচাঁদের স্নেহধন্য অন্যতম প্রতিনিধি কুটিশ্বর বিশ্বাস। এই মিটিং-এর পর রাইচরণবাবু তে-ভাগা আন্দোলনের জন্য প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন অত্যাচারী জমিদার জোরদারদের বিরুদ্ধে। আর এই কাজে পৌন্ড্র জাতির লোকেরা মুসলিম কৃষক সমাজ তাঁকে সহযোগীতা করেছিলেন। এরপর বাংলা ১৩১৪ সালে (ইংরাজী ১৯০৮ সালে) মনিরামপুর হতে সাড়ে পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে মনোহরপুর গ্রামে প্রথমতঃ এবং তার কিছুদিন পর নিকতবর্তী পাড়দিয়া গ্রামে অস্পৃশ্য পতিত নমঃ মুসলমানদের অন্য একটি বৃহৎ কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্বসম্মতভাবে তে-ভাগা আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

১৯২২ সালের জন মাসে বরিশাল জেলার পিরোজপুরে গুরুচাঁদ ঠাকুরের সভাপতিত্বে এক বিশাল কৃষক সমাবেশে সর্বপ্রথম আমূল ভূমি সংস্কারের দাবী তোলা হয়। বাংলার কৃষকদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে তিনি বিভিন্ন জেলায় সভাসমিতি করেন। ১৯৩৩ সালে মেদিনীপুরের ঘাটালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলনে তিনি প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সেজন্য গুরুচাঁদ ঠাকুরকে তে-ভাগা আন্দোলনের জনক বলা হয়। তিনি ছিলেন একজন কৃষক দরদী দরিদ্র মানুষের মুক্তি আন্দোলনের দিশারী।

১৯১০ সালে তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার স্যামুয়েল ন্যাথান ওড়াকান্দী পরিদর্শনে আসেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর তাঁর কাছে শিক্ষা, ছাত্রাবাস স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য দাবী জানান।

১৯১০ সালে মার্চ মাস নাগাদ (বাংলা ১৩১৬ সাল), বারুনীর সময় অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন পালনের মাসে (১৩ই মার্চ) গুরুচাঁদ ঠাকুর পতিত জাতির মধ্যে বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন। আর বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

১৯১২ সালে পঞ্চম জর্জ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে সমাজ সেবার জন্যদরবার মেডেলউপহার দেন।

ঊনিশ বার অব্দে দিল্লী দরবার।

রুপার মেডেলপ্রভু পেল উপহার। (গু..পৃঃ ৫৬৬)

১৯১১ সালে চন্ডাল গালি মোচন, পরিবর্তে নমঃশূদ্র নাম সরকারী নথীতে অন্তর্ভুক্ত করান গুরুচাঁদ ঠাকুর। লোকগণনায় বাংলায় চন্ডালদের নমঃশূদ্র সম্প্রদায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের হাজার বছরের চন্ডাল গালি মোচন করা হয়।

১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার ঘোষণা অনুসায়ী পূর্ববঙ্গের তপশিলীভুক্ত জাতি সমূহের ছাত্রদের পড়াশুনার সুবিধার্থে কিছু সরকারী হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়।

১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পূর্ব্ব বাংলার পিরোজপুর, বরিশাল এবং ঢাকায় সরকারী অফিসে অনুন্নত শ্রেণীর মানুষের জন্য জনসংরক্ষণ ব্যবস্থা পুরপুরি চালু হয়ে যায়।

১৯১৮ সালে কলকাতায় অনুরূপ একটি হোস্টেল খোলা হয় এবং তার পরিচালন ভার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ন্যাস্ত হয়।

১৯১৯ সালে মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে অনুন্নত শ্রেণীর এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রেসিডেন্সী বা প্রদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এইভাবে যুগনায়ক গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে মতুয়া আন্দোলনের ফলে সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষা, চাকরি আইন সভায় সংরক্ষণ সৃষ্টি হয়।

১৯২১ সালেগান্ধীজীর নির্দেশে চিত্তরঞ্জন দাস গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর এর যোগ্য জবাব দেন আন্দোলনে যোগ না দেবার জন্য।

১৯২৩ সালে খুলনা জেলায় অনুন্নুত মানুষের উন্নয়নের জন্য যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গুরুচাঁদ ঠাকুর সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দীর্ঘ ভাষণ দেন।

এই সম্মেলন তে, নমঃশূদ্র কোন পথে,

চালনা করিবে রাজনীতি। (গু..পৃঃ৪৪২)

এই সম্মেলনে নমঃশূদ্ররা কিভাবে রাজনীতি করবেন, সেবিষয়ে গুরুচাঁদ ঠাকুর মতামত ব্যক্ত করেন। সভাসদ্গণ সেই মতামত সর্ব সম্মতিতে গ্রহণ করেন।

১৯২৬ সালে “The Bengal Depressed Classes Association” গঠিত হয় খুলনা শহরের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।

১৯৩১ সাল নাগাদ ঢাকা ডিভিশনে মূলত; নমঃশূদ্র ছেলে-মেয়েদের পঠন পাঠনের নিমিত্ত গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে ১০৬৭টি বিশেষ বিদ্যালয় গড়া সম্ভব হয়েছিল।

১৯৩১ সাল নাগাদ পিছিয়ে রাখা সমাজের সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রেসিডেন্সি ডিভিশনে ৫৬৯টি, সাঁওতাল বা আদিবাসী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য বর্ধমান ডিভিশনে ২৪৬টি এবং নমঃশূদ্র ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য ঢাকা ডিভিশনে ১০৬৭টি স্কুল স্থাপন করেন। তো দেখা যায় সর্বমোট ১৮৮২টি স্কুল স্থাপন করেন। আর ডাঃ সি. এস. মীডের সহায়তায় বৃটিশ সরকার দ্বারা এই স্কুলগুলিকে প্রথমে ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষার স্কুল এবং পরে মিড্ল ইংলিশ স্কুলে অনুমোদন করান। আর পরবর্তিতে এর মধ্য থেকে কিছু স্কুল উচ্চ ইংরাজী স্কুলে উন্নীত হয়।

১৯৩২ সালে ওড়াকান্দীতেহরি-গুরুচাঁদ মিশনপ্রতিষ্ঠা করে সেই মিশনের সহায়তায় ওড়াকান্দীর তালতলায় নারী শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৮১ সালে দত্তডাঙ্গা গুরুচাঁদ ঠাকুর জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার পর থেকে পিছিয়ে রাখা শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষা আন্দোলনের যে জোয়ার বইতে শুরু করে, আর দিকে দিকে যে পাঠশালা তৈরী হতে থাকে সেই সব পাঠশালার মধ্যে বহু পাঠশালা ১৮৯০ সালের মধ্যে ইংরাজী উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে পরিনত হয়। আর এই সব বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

গুরুচাঁদ ঠাকুর সম্পর্কে ডঃ সি. এস. মীড্ বলেছেন-

“Guruchand Babu is a leader of outstanding ability and of wide-spread influence. In the various activities of my missionary life he has made possible many things that without his backing could not have been carried through. With a liberality of thought, a courage and a foresightedness uncommon among men of the older orthodox school. He has sought the up lift of great namasudra caste. ”

(গু..পৃঃ VII)

১৯৩৭ সালে ৯১ বছর বয়সে ২৭ শে মার্চ গুরুচাঁদ ঠাকুরের মহাপরিনির্বাণ হয়।

১৯৩৭ সালে ২৭শে মার্চ শিক্ষা আন্দোলনের এর অগ্রদূতের মহাপরিনির্বাণের পরে কোলকাতার এলবার্ট হলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের স্মৃতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যনার্জী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। )

#সংগৃহীত

Amrita Kumar Bapari

Comments

Popular posts from this blog

Harichand